সংঘাতের আগুনে পুড়ছে মনিপুর
নিউজ ডেস্ক
সংঘাতের আগুনে পুড়ছে মনিপুর
দুই মাসের বেশি সময় ধরে উত্তাল ভারতের ছোট্ট রাজ্য মনিপুর। চলছে জাতিগত সংঘাত, সহিংসতা-বিক্ষোভ। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় ১৩০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন চার শতাধিক, ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ। অর্থাৎ পুরোপুরি যুদ্ধংদেহী অবস্থায় ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত গিরিবাসী জনগণের রাজ্য।
সংঘাত শুরু যেভাবে: মণিপুরের রাস্তায় দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ফুঁসে ওঠে মনিপুর থেকে সারা ভারত।
দিল্লিতে নিযুক্ত বিবিসির সাংবাদিক গীতা পাণ্ডে বলছেন, ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নকে যে কোনো সংঘাতের অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, মনিপুরে সেটি প্রমাণিত হলো। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দুই নারীকে অসম্মানের যে ভিডিও এখন ভাইরাল হলো, সেই ঘটনাটি আসলে ঘটেছে গত মে মাসে। ওই সময় একটা ভুয়া খবর ছড়িয়েছিল যে কুকি মিলিশিয়ারা মেইতেই গোষ্ঠীর এক নারীকে ধর্ষণ করেছে। এর জের ধরেই হয়ত বিক্ষুব্ধ মেইতেই জনতা কুকি গোষ্ঠীর দুই নারীকে বর্বর কায়দায় নির্যাতন করে। দুই নারীর মধ্যে একজনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে।
আজ অবধি সেই সংকট সমাধানের কাছেও যেতে পারেনি সরকার। ফলে জ্বলছে মনিপুর- উত্তাল মনিপুর। কিন্তু প্রশ্ন হলো শুধুমাত্র দুই নারীর ভিডিও ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করেই পরিস্থিতি এতদিন উত্তাল থাকে কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। দুই নারীর ভিডিও ভাইরাল হওয়া একটি বর্বরোচিত ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মেইতেই ও কুকিদের বিরোধ থেকেই এ অস্থিরতার শুরু।
জমির অধিকার নিয়েও দ্বন্দ্ব: মনিপুরের দুই আদিবাসী গোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই এবং সংখ্যালঘু কুকিদের মধ্যে জমির মালিকানা ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে চলমান বিরোধ দীর্ঘ দিনের। দুই নারীর ভিডিও ভাইরাল হওয়াকে কেন্দ্র করে যেটা গৃহযুদ্ধে গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যটিতে মেইতেইরা প্রভাব ও আধিপত্য বজায় রেখেছে। ৬০ আসনের বিধানসভায় ৪০ সদস্য নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেইতিদের। এদের বেশিরভাগ অগ্রসর অঞ্চল উপত্যকা বা ইম্ফলে বাস করে। বিপরীতে পাহাড়ে বসবাসকারী কুকিরা অনেকটাই অনগ্রসর। তাদের ভূমি সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুসারে, মেইতেইসহ আদিবাসী নয় এমন কেউ পাহাড়ে ভূমি কিনতে পারে না। এখানেই মূল সংকট লুকায়িত।
পাহাড়ে মেইতেই ছাড়া আর কারো অধিকার সংরক্ষিত নয় তাছাড়া রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্ববহও মেইতেই জনগোষ্ঠী। অন্যান্য বসবাসকারী গোষ্ঠীগুলো বহুকাল ধরে প্রান্তিক অবস্থায় রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিনের জমাক্ষোভ এবারে বিস্ফোরিত হয়েছে। এবারে মনিপুরের অবস্থানগত দিকটাও তুলে ধরা দরকার। মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষে মনিপুরের অবস্থান ।
মনিপুর রাজ্যের প্রায় ৩৩ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ মেইতেই গোষ্ঠীর। বাকি প্রায় ৪৩ শতাংশ কুকি ও নাগাসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষ। আরও ছোট ছোট আরও কয়েকটি আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে তারা সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীগুলোর মতোই। তবে মেইতেই, কুকি, নাগা- এই তিনটিই প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী। মেইতেই গোষ্ঠীর শেকড় মনিপুর, মিয়ানমার ও আশপাশের এলাকাজুড়ে। তারা মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তবে গোষ্ঠীর কেউ কেউ আবার স্থানীয়ভাবে প্রচলিত ‘সানামাহি’ ধর্মেরও অনুসারী। অপর দিকে কুকিরা মূলত খ্রিষ্টান। এই গোষ্ঠীর বিস্তার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে। মিয়ানমারেও কুকি জনগোষ্ঠীর দেখা পাওয়া যায়। মেইতেইদের বসবাস মনিপুৃরের রাজধানী ইম্ফল ঘিরে। আর কুকিদের প্রধান আবাস ইম্ফলের আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। চলমান সহিংসতা শুধু মেইতেইদের তফসিলি জাতিভুক্তি হওয়াতে সীমাবদ্ধ করা কঠিন। দুই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান উত্তেজনার আরও বিভিন্ন কারণ রয়েছে। রাজ্যের ভৌগোলিক অঞ্চলের মাত্র ১০ শতাংশ উপত্যকায় হলেও অধিকাংশ জনগণ এখানেই বসবাস করে।
তফসিলী জাতি ইস্যুতে কুকিদের প্রতিবাদ: সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও মেইতেইরা সরকারিভাবে সংখ্যালঘু তফসিলী জাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবি তুলেছে। গত মে মাসে মনিপুরের হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়। এরপর কুকিরা প্রতিবাদ জানায়। তাদের বক্তব্য হলো, এমনিতেই মনিপুরের রাজ্য সরকার ও সমাজ ব্যবস্থায় মেইতেইরা প্রভাবশালী অবস্থানে আছে। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ও অগ্রসর মেইতেই গোষ্ঠীর তফসিলীভুক্ত হতে চাওয়ার নেপথ্যে কর্মসংস্থান, কোটা বা অন্যান্য অর্থনৈতিক ইস্যু খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাজ্যে সমৃদ্ধি, শিক্ষা, অবকাঠামো, সংস্কৃতি ও ভাষাগত দিক থেকে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে এগিয়ে তারা। গুরুত্বপূর্ণ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি দফতর, হাসপাতাল ও সংস্থা সবখানের আধিপত্য মেইতেইদের । মেইতেই অধ্যুষিত জেলাগুলো কুকিদের জেলাগুলোর তুলনায় অবকাঠামো উন্নয়নে ভালো দক্ষতা দেখাচ্ছে।
সংঘাত জাতিগত কোটা নিয়েও: এরইমধ্যে মেইতেদের একাংশ কোটা সুবিধা পাচ্ছে বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচির আওতায়। মেইতেই ভাষা ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার একটি এবং সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। অন্যদিকে মেইতেই গোষ্ঠীর অভিযোগ, কুকি ও নাগারা উপত্যকায় জমি কিনতে পারছে। কিন্তু মেইতেই জনগোষ্ঠী আইনের কারণে পাহাড়ে জমি কিনতে পারছে না। তাদের উপত্যকায় আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। তাদের দাবি, তারা তফসিলীভুক্ত হলে জমি কেনাবেচায় বাধা থাকবে না। ফলে উপত্যকা ও পাহাড়ের মধ্যে নতুন মেলবন্ধন তৈরি হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে মেইতেইদের তফসিলীভুক্ত হওয়ার দাবি মূলত ভূমি সংশ্লিষ্ট। এই তালিকাভুক্ত হলে মেইতেইরা পাহাড়ে জমি কিনতে পারবে। আর এটিই কুকিদের প্রতিবাদের মূল কারণ। তাদের আশঙ্কা অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর মেইতেই গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের ভূমি কিনবে বা তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে তাদের উচ্ছেদ করবে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার তাদের তফসিলি মর্যাদা দিলে তাদের সুবিধা আরও বাড়বে। কিন্তু কুকিদের যুক্তি হলো- তফসিলীভুক্ত হলে মেইতেইরা কুকি অধ্যুষিত এলাকায়ও আরও সহজে জমি-বাড়ি কিনতে পারবে। রাজ্যের মেইতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নাম করে আগে থেকেই কুকিদের উচ্ছেদ করছে বলেও দাবি করে তারা। ফলে বিক্ষোভে নামে কুকিরা।
মেইতি-কুকির ‘দা কুমড়া সম্পর্ক’: মিয়ানমার থেকে মানুষের অনুপ্রবেশ নিয়েও বিরোধ ছিল রাজ্যে। এছাড়া বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিচ্ছিলো কুকিদের এই বিক্ষোভে। ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বিভেদের সূত্র ধরে অনেক আগে থেকেই মেইতেই, কুকি ও নাগা গোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীগুলোর মধ্যে সংঘাতপূর্ণ অবস্থান ছিল। বসতি স্থাপন, সম্পদের মালিকানা এসব নিয়ে তারা কয়েক দশক ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে। তবে সর্বশেষ বিক্ষোভ নিয়ে মেইতেই ও কুকিরা একে অপরের বিপক্ষেক্ষ দাঁড়িয়ে যায়।‘দ্য ফ্রন্টিয়ার মনিপুর’ পত্রিকার সম্পাদক ধীরেন এ সাদোকপাম বলছিলেন, ‘এবারকার সংঘাত একেবারেই জাতিগত বিরোধ থেকে, এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।’
কিছুতেই সংকট কমছে না: এই সংকটকে কেন্দ্র করে গত মে মাস থেকে সহিংসতা বড় আকার ধারণ করেছে মনিপুরে। খুন, জখম, লুটপাট, উচ্ছেদ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী নামিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এমনকি পুলিশের সাঁজোয়া যানও লুটের শিকার হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দুই কুকি নারীর ওপর এমন নির্মম নির্যাতন পুরো ভারতের জন্য লজ্জার। ঘটনার সঙ্গে দায়ী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। মনিপুরের কন্যাদের সঙ্গে এহেন আচরণ কোনোভাবেই ক্ষমা করা হবে না। তবে এই মন্তব্যের পর প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে, নরেন্দ্র মোদি কেন এতদিন মনিপুর ইস্যুতে নীরব ছিলেন। মনিপুরে প্রায় ৪০ হাজার সেনা, আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। তবে তারা সংঘাত দমনে হিমশিম খাচ্ছে। স্থানীয় কিছু আদিবাসী নেতা মনিপুর কেন্দ্রের শাসন জারির দাবি তুললেও কেন্দ্রীয় সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। মনিপুরে এখন ক্ষমতায় আছে নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি। রাজ্য সরকারের প্রধান এন বিরেন সিং মেইতেই গোষ্ঠীর সদস্য। বিধানসভার ৬০টি আসনের মধ্যে ৪০টিই মেইতেইদের দখলে। বীরেন সিং সরকারের অভিযোগ, কুকি মিলিশিয়ারাই এই সংঘাতে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে।
একের পর হামলায় বিপর্যস্ত মনিপুর: ভারতের মনিপুর রাজ্যের স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি বিদ্রোহীরা গত সপ্তাহে তারা ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করে হামলা চালায়। গত শুক্রবার মনিপুরে জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলায় দফায় দফায় ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনায় ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই দুই জেলায় ড্রোন ও রকেট হামলার পাশাপাশি গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আকাশে একের পর এক ড্রোন উড়তে দেখে আতঙ্কিত বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘরে ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, মনিপুরের বিষ্ণুপুর ও ইম্ফল পূর্ব জেলার আকাশে বহু ড্রোন দেখতে পান বাসিন্দারা। এ সময় তাদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে এই দুই জেলার বাসিন্দারা ঘটনার সময় তাদের বাড়িঘরের লাইট বন্ধ করে দেন। ভয়ে কেউই বাড়ির বাইরে বের হতে পারেননি রাতে। ইম্ফল পশ্চিম জেলার আশপাশের দুটি স্থানে ড্রোন থেকে বোমা ফেলেছেন সেখানকার বিদ্রোহীরা। এই ঘটনার পর বিষ্ণুপুর ও ইম্ফল পূর্ব জেলার আকাশে অনেক ড্রোন উড়তে দেখেছেন বাসিন্দারা। মনিপুরের সরকারি এক কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন করে দেখা দেওয়া সংঘাতপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। তারা বেশিসংখ্যক মানুষের একসাথে চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ করছেন। এর আগে মনিপুরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মাইরেম্বাম কোইরেংয়ের বাসভবনে রকেট হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এতে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হন।
এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পার্শ্ববর্তী চুরাচাঁদপুর জেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহৃত তিনটি বাঙ্কার ধ্বংস করেছে। গত বছরের মে মাসে মনিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতে সম্প্রদায় এবং কুকি উপজাতিদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। ওই সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তচ্যুত হয়। এরপর রাজ্যজুড়ে থেমে থেমে সহিংসতা চললেও এই প্রথমবারের মতো চলমান জাতিগত সংঘাতে ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ায় মনিপুর সরকার রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হয়ছে।
মনিপুরে নতুন করে সহিংসতার মধ্যে ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব এবং থৌবল জেলায় গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে সর্বাত্মক কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের শান্তি পুনরুদ্ধারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের এক দিন পরই মনিপুরের এই তিন জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলে মোতায়েনকৃত সিআরপিএফের ৫৮ নম্বর ব্যাটালিয়নকে মনিপুরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের লাতেহার থেকে ১১২ নম্বর ব্যাটালিয়নকে সরিয়ে মনিপুরে পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ইউনিটের সদরদপ্তর হবে কাংভাই আর দ্বিতীয় ইউনিটটি ইম্ফলের আশপাশে অবস্থান করবে।
রাজ্যের চলমান সংঘাতে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দেয়া হচ্ছে। এবার পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ঘোষণা করেছে মনিপুর রাজ্য সরকার।
পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে: ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে, চীন, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত সাতটি রাজ্যকে একসঙ্গে বলা হয় ‘ সেভেন সিস্টার’ বা সাত বোন। নৈসর্গিক শোভা, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর এই পাহাড়ি জনপদগুলো। একই সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে এই অঞ্চলটি যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ থেকেছে, সেটি অস্বীকার করার কিছু নেই। এসব রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষই নানা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। বস্তুত সাতচল্লিশে ভারতের স্বাধীনতার পর (কাশ্মীরকে বাদ দিলে) দেশের যেখানে সবার আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মাথাচাড়া দেয়, সেটি ছিল নাগাল্যান্ড। এ জেড ফিজো-র নেতৃত্বে নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল (এনএনসি) তাদের স্বাধীনতার লড়াই শুরু করে ১৯৫০-র দিকেই। পরে এনএনসি ভেঙে এনএসসিএন তৈরি হয়েছে, সেই সংগঠনও মুইভা আর খাপলাং-এর অনুগত গোষ্ঠীতে ভেঙে দু’টুকরো হয়েছে কিন্তু সার্বভৌম ‘নাগালিম’ বা গ্রেটার নাগাল্যান্ডের দাবিতে নাগাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন কিন্তু আজও পুরোপুরি থামেনি।
এরই মধ্যে আশান্ত মনিপুর। বৃহৎ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সংগ্রাম করেছে। নাগাদের ‘নাগালিম’ শিখদের খালিস্তান,। সুভাষ ঘিসিংয়ের নেতৃত্বে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন হয়েছে। কাশ্মিরেতো আন্দোলন চলছেই। কিন্তু ড্রোন, রকেট নিক্ষেপের ঘটনা এই প্রথম। মনিপুরের গোলযোগ বাড়ছেই । ভারত সরকার এখানে শক্তিবৃদ্ধি করেই মনে হয় ঘটনার সামাল দিতে চাইছে। সেটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছে না। ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষোভের আগুন।
- শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নে ৪ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক
- ইসরায়েলি হামলায় গাজার সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক পরিবারসহ নিহত
- আরব সাগরে নিম্নচাপ : ইতিহাসে ভয়াবহ ঝড়ের শঙ্কা
- ১০২তম জন্মদিনে স্কাইডাইভ, ৭ হাজার ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপ
- যে গ্রামের পুরুষদের বিয়ে করলে নারীরা পাবে ৫ লাখ টাকা
- গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৮৯ জন
- গাজায় মার্কিন তৈরি এমকে-৮৪ বোমার আঘাতে মৃতদেহ গলে বিকৃত হয়ে গেছে, নিহত ১৫
- গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে
- মণিপুরে গোপন অস্ত্রাগারের সন্ধান, জব্দ বেশ কিছু যুদ্ধাস্ত্র
- গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, নিহত বেড়ে ৪০৭৮৬