ঢাকা, শুক্রবার   ০৫ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : রাশিয়াকে প্রকল্পের ব্যয় টাকায় পরিশোধ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২১, ২ জুলাই ২০২৪  

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : রাশিয়াকে প্রকল্পের ব্যয় টাকায় পরিশোধ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : রাশিয়াকে প্রকল্পের ব্যয় টাকায় পরিশোধ

পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মীয়মাণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের চুক্তিমূল্যের একাংশ দেড় কোটি ডলার মার্কিন ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় পরিশোধ করেছে সরকার। সম্প্রতি রাষ্ট্র পরিচালিত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাশিয়ার ঠিকাদারকে ওই অর্থ পরিশোধ করা হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ডলার সংকটের কারণে চুক্তিমূল্যের অগ্রিম অর্থ নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। বিল নিয়মিত পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের বিকল্প হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট বাংলাদেশি মুদ্রা নিতে রাজি হওয়ায় তা টাকায় পরিশোধ করা হয়।

রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক জ্বালানি কেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮.১৪ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্পে বছরে বরাদ্দ করা ব্যয়ের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাছান বলেন, ‘প্রকল্পের মোট চুক্তিমূল্যের অগ্রিমের ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা এরই মধ্যে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করা হয়েছে। এই টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সাব-কন্ট্রাক্টের কাজে ব্যয় করবে।’

রূপপুর প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ পর্যায়ে।

চলতি বছরের শেষ দিকেই এর পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হতে পারে। আর আগামী বছর বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে।

গত জুন মাসের শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) বৈঠকে ডলারের পরিবর্তে দেশীয় মুদ্রায় চুক্তির অর্থ পরিশোধের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পিআইসির বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা গেছে, চুক্তিমূল্যের ১০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধের বিষয়ে জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির (জেসিসি) সভায় ডলারের পরিবর্তে আংশিক অর্থ টাকায় পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের সঙ্গে সম্পূরক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।

স্বাক্ষরিত চুক্তির ধারা ১ অনুসারে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের অগ্রিমের ছয় কোটি ৪৫ লাখ ১৫ হাজার ডলার থেকে দেড় কোটি ডলার টাকায় পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পিআইসির সভার কার্যপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চুক্তিমূল্যের ৯০ শতাংশ (১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার) রাশিয়ার ঋণ সহায়তা এবং বাকি ১০ শতাংশ (১.২৬৫ বিলিয়ন ডলার) বাংলাদেশ সরকার অগ্রিম হিসেবে দেবে। চুক্তিতে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বছরে চারটি হিসাবে মোট ৩২ কিস্তিতে ১২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধের কথা রয়েছে। চুক্তির শর্তানুসারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ভেনোশকোনমন ব্যাংকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২ কিস্তিতে ১০৭ কোটি ডলারের কিছু বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধাবস্থার কারণে রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ব্যাংকের ওপর পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আসে। এ কারণে ১০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রকল্পের কাজ চালু রাখতে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভার নির্দেশনা অনুযায়ী রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসসি এটমস্টয়এক্সপোর্টের নামে সোনালী ব্যাংকে সে বছরের ২৫ মে থেকে একটি এফসি (ফরেন কারেন্সি) হিসাব পরিচালনা করা হচ্ছে। ওই ব্যাংক হিসাবে ২০২২ সালের নির্ধারিত সোয়া আট কোটি ডলারের মতো পরিশোধ করা হয়। ২০২৩ সালের সারা বছর এবং ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক মিলিয়ে ১০ কোটি ডলারের কিছু বেশি অর্থ এটমস্ট্রয়এক্সপোর্টকে পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই অর্থ ডলারে পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে সপ্তম জেসিসি সভায় আংশিক অর্থ বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

পাকিস্তান আমল থেকেই পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা বলাবলি হলেও এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় অনেক পরে, স্বাধীন বাংলাদেশে। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। তবে মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এই প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত থ্রিজি (+) ভিভিইআর ১২০০ রিঅ্যাক্টর স্থাপন করা হয়েছে। পরিকল্পিত দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়